সূর্যোদয়ের খুনি

সূর্যোদয়ের খুনি

ঘরে বিরাজ করছে পিনপতন নিরবতা।বুঝাই যাচ্ছে কোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।একটু কেশে নিলেন রমেশ বাবু।তারপর শুরু করলেন কথা।সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে।
-শোনো!আজকে তোমাদের ডেকেছি। কারণ একটা জরুরী বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই।বাবা মা মারা যাবার পর তোমাদের কোলে পিঠে মানুষ করেছি আমি।তোমাদের বৌদি অনেক ভালো মানুষ।তোমাদের জন্য নিজের সন্তান পর্যন্ত নিলেন না।একজন মহিলা মা ডাক থেকে বঞ্চিত হলে তার কি পরিমাণ কষ্ট হয়। বুঝো তো?
ঘরে কোনো সাড়া শব্দ নেই।মনে হচ্ছে উনি একা একা কথা বলছেন।অথচ ঘরে বিরাজ করছে প্রায় ৭ জন মানুষ। রমেশ বাবু ও তার ৩ ভাই এবং তাদের ৩ ছেলে।রমেশবাবু আবারও বললেন, কি হলো?
চুপ কেন সবাই??
এবার সেজো ভাই চন্দন বাবু বললেন, দাদা বুঝেছি।তারপরে বলুন।
রমেশবাবু আবার শুরু করলেন, তার ত্যাগকে তোমরা মূল্য দিবে কিনা জানি না।তা নিয়ে অবশ্য কোনো দাবিদাওয়াও নেই।আসল কথায় আসি, আমার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না আজকাল।তোমাদের বৌদি বললো জমি জমাগুলো তোমাদের ভাগ করে দিতে।সে কারণেই এখানে ডাকা।আমি চাই তোমরা কোনো ঝামেলা ছাড়া সমান ভাগে জমিটা ভাগ করে নাও।
এবার ছোট ভাই শীতলচন্দ্র বাবু বললেন, দাদা সমানভাবে দিবে দাও।তবে আমার জমি তুমি নিও।কারণ বৌদি আমাদের মায়ের ভালোবাসা দিয়েছেন।আমি কখনো মাকে পাইনি।জন্মের পর পরই মাকে হারিয়েছি।বৌদিই আমার মা।আমার সবটুকু জমি আমি বৌদির নামে লিখে দেবো।
মেজো ভাই রাঘব বাবু চুপচাপ শুনছিলেন কথাগুলো।তিনি শুধু একটা বাক্যই বললেন, যার যা ইচ্ছা করুন,আমারটা ঠিক থাকলেই চলবে।
Natural Beauty.specialtyintelligencee.blogspot.com
রমেশবাবু আর কথা না বাড়িয়ে বললেন,ঠিক আছে।কাল সকালে তাহলে উকিলবাবুকে ডেকে জমির ভাগ করে দেওয়া হবে।এখন সবাই খাবার খেয়ে ঘুমাতে যাও।
সবাই খাবার খেয়ে ঘুমাতে গেলো।কারোর সাথেই কারোর কোনো কথা হলো না।হঠাৎ সকাল ৫ টায় সকলের ঘুম ভাঙ্গলো শীতলচন্দ্র বাবুর চিৎকারে।ড্রয়িং রুমে নিথর একটি ছুড়িবিদ্ধ দেহ পড়ে আছে।ছুড়িটা পেছন দিক দিয়ে ঢুকানো ছিলো।আর দেহটা উপুর হয়ে পড়ে ছিলো।রমেশবাবু আস্তে করে দেহটা উল্টিয়ে চিৎ করে দিয়ে একটা চিৎকার করে উঠলেন।কারণ তিনি ঐ নিথর দেহটা দেখে বুঝতে পেরেছিলেন সেটা তার মেজো ভাই রাঘবের দেহ।বাড়ির সকলের মুখ বিবর্ণ। ক্ষণিকেই মহিলাদের কান্নার শোরগোল শুরু হলো।পুরুষরা একে অন্যকে সন্দেহের চোখে দেখা শুরু করলো।ইতিমধ্যে রমেশবাবু থানায় ফোন করে ঘটনাটি জানিয়ে দিলেন।পুলিশ আসলো প্রায় ১ ঘন্টা পর।এসে কিছু হাবিজাবি প্রশ্ন করে হাজার পাঁচেক টাকা নিয়ে চলে গেলো।রমেশবাবুর পালকপুত্র আদি।নামকরা গোয়েন্দা। অবশ্য তার ভাইয়েরা কেউ জানতেন না যে উনার পালকপুত্র আছে।যাকগে উনি আদিকে সব বললেন।আদি বললো, বাবা তুমি দুশ্চিন্তা করো না।আমি আসছি।আদি শহরে থাকে।রমেশবাবুর বাড়ি থেকে শহর বেশ দূরেই।ঘন্টা দুয়েক লাগে।আদি পৌঁছালো প্রায় সকাল সাতটার দিকে।রমেশবাবু আদিকে নিজের ছেলে বলে পরিচয় না করিয়ে দিয়ে বললেন, উনি আদি।একজন নামকরা তরুণ গোয়েন্দা।তোমরা হয়তো নাম শুনেছ।আমি উনাকে এনেছি মেজোর খুনের রহস্য উৎঘাটনের জন্য। তোমাদের কারো কোনো আপত্তি আছে??
শীতলচন্দ্রর মুখটা ক্ষণিকেই চুপসে গেলো।সেটা অবশ্য আদির চোখ এড়ালো না।তড়িঘড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে শীতলচন্দ্র বললেন, না দাদা।আপত্তি থাকবে কেন??আমরাও তো চাই রহস্য সমাধান হোক।
আদি শুধু বললো, আমি ফ্রেশ হতে চাই একটু।তারপরে এসব নিয়ে কথা বলবো।
বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেলো আদি।ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তার টেবিলে বসে প্রশ্ন করলো, আচ্ছা লাশটা প্রথম কে দেখেছিলো??
শীতলচন্দ্র বললো, আমি দেখেছিলাম।
-আপনি এত সকালে কি করতে গিয়েছিলেন??(আদি)
-আমি সকালের সূর্যোদয় দেখতে গিয়েছিলাম।
-কোন দিক দিয়ে??
-ড্রয়িংরুমের জানালা দিয়ে।
-হঠাৎ সূর্যোদয় দেখছিলেন যে ব্যাপার কি বলুন তো!
-আজব তো!আমি জানতাম নাকি যে দাদা খুন হয়ে পড়ে থাকবে??আমি তো গিয়েছিলাম সকালের মিষ্টতা উপভোগ করতে।
-রেগে যাচ্ছেন কেন??
-তো কি করবো?
-আচ্ছা খাবার খান শীতল কাকা।
বাড়ির সকলের সাথে কথা বললো আদি।কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না।রহস্যের জট কিছুই খুললো না।কারণ কেউই তেমন কোনো তথ্য দিতে পারলো না।সারাদিন ভাবতে ভাবতেই কেটে গেলো।রাতে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো।হঠাৎ ৪:৪০am এ ঘুম ভেঙ্গে গেলো।উঠে বাথরুম সেরে ড্রয়িংরুম এ এসে বসলো।খুনের রহস্য নিয়ে ভাবছিলো।হঠাৎ লাফিয়ে উঠে চিৎকার করে সবাইকে ডেকে তুললো।তার আগেই পুলিশকে কল করেছিলো।এস.আই আদির বন্ধু বলে দ্রুতই হাজির হলো।আদি সবাইকে বললো আমি খুনীকে পেয়ে গেছি।শীতলচন্দ্রের চোখমুখ শুকিয়ে গিয়েছে এই কথা শোনামাত্র।হৃৎপিন্ড জোরে জোরে স্পন্দিত হতে শুরু করলো। তবুও নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে বললেন, কে খুনি??
-কেন কাকা??জানেন না বুঝি??আপনার তো জানার কথা।(আদি)
-মানে!আমি কি করে জানবো??
-কারণ খুনটা আপনিই করেছেন।
-আআআআআআআমি কিভাবে করলাম??
-কাকা তোতলাচ্ছেন কেন??
-না।এমনি।
-এস.আই এ্যারেস্ট করুন দ্রুত।কাকা কিছু বলতে চান??
-কিভাবে বুঝলেন আমিই খুনি??
-সবাই সত্য কথা বলেছে কাকা।আমার মনে হলো আপনিও সত্য বলছেন।তবে আপনাকে আমি সন্দেহ করেছিলাম প্রথমেই। কারণ আপনি আমাকে দেখেই ভয় পেয়েছিলেন।তাছাড়া আপনি বলেছিলেন আপনি সূর্যোদয় দেখতে এসেছিলেন এ জানালা দিয়ে।ব্যস্ততায় আমি এটা খেয়াল করতেই ভুলে গিয়েছিলাম যে জানালাটা উত্তর দিকে।এদিক দিয়ে কোনো ভাবেই সূর্যোদয় দেখা সম্ভব না।
-যথেষ্ট চালাক আপনি।একটা ছোট্ট বিষয়। অথচ কেউই খেয়াল করেনি।
-ধন্যবাদ কাকা।
রমেশবাবু কান্ডজ্ঞানহীন হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এটা কেন করলে??
-দাদা! আমাকে মাফ করে দিও।আমি চাইনি মারতে।কিন্তু সম্পদের দরকার ছিলো অনেক।তোমরা আর কয়দিন বাঁচবে সব সম্পদগুলো বৌদির নামে থাকলে আমি যেকোনো সময় পেয়ে যেতাম।আর দাদা মারা গেলে ছোট হিসেবে ঐ জমিগুলোও আমার নামেই করে দিতে তুমি।সে কারণে……..
-তোমাকে আমার ভাই বলে পরিচয় দিতেও লজ্জাবোধ করছি। ইন্সপেক্টর একে নিয়ে যান।
পুলিশ শীতলচন্দ্র কে নিয়ে চলে গেলো।আদি তার পালকপিতা রমেশকে বললেন, বাবা! অর্থই সকল অনর্থের মূল!কথাটার যথার্থতা বুঝলে তো??
রমেশবাবুর যেন কারো কথাই আর কানে ঢুকলো না।হয়তো ভাইয়ের নীচ মানসিকতার পরিচয়ে তিনি স্তব্ধ হয়ে গেছেন।

No comments

Powered by Blogger.