অন্ধের পূর্ণতা

অন্ধের পূর্ণতা 

  কদিন অন্ধ ছেলেটি সমুদ্রের ধার দিয়ে হাঁটছিলো।তার হাতে ছিলো লাল গোলাপগুচ্ছ।ছেলেটির আজ তার স্মৃতি মন্থন করতে গিয়ে মনে পড়লো সেই সুন্দর সোনালী দিনের কথা।যেদিন সে সমুদ্রের ধারে হাঁটতে গিয়ে পেয়েছিলো তানজিরা কে।যে মেয়েটি আজ তার খুব আপনজন।অন্ধ ছেলেটির নাম দিনার। সেদিন দিনার সমুদ্রের গর্জন শুনতে গিয়েছিলো।দিনার জন্মগত ভাবে অন্ধ।আল্লাহ্ যদি কারো কোনো ইন্দ্রিয়ের সক্ষমতা কমিয়ে দেন তাহলে তার অন্য কোনো ইন্দ্রিয়ের সক্ষমতা বাড়িয়ে দেন।দিনারকেও দিয়েছিলেন।দিনার প্রচুর অনুভূতিপ্রবণ ছিলো।সে সব কিছু কেমন যেন অনুভব করতে পারতো।দিনার একা সমুদ্রের ধারে ধীর গতিতে হাঁটছিলো এবং সমুদ্রের গর্জনের ভাবার্থ বোঝার চেষ্টা করছিলো।এমন সময় তার পাঞ্জাবির পিছনের ঝুলের এক কোণায় হাল্কা টান অনুভব করলো।সাথে মৃদু হতাশায় কন্ঠ জড়ানো এক বাচ্চার আওয়াজ পেলো।।
-ভাইজান একটা গোলাপ লন না,আইজক্যা সকাল থ্যাইক্যা এক্টাও কেউ লই নি,মায়ের ঔষধ কিনুন লাগবো।
পিছন ফিরে হাটু মুড়িয়ে হাল্কা বাচ্চাটির দিকে হেলে দিনার বলল,
তাই??তোমার নাম কি বাবু??
-আশিক।
-তোমার বাড়িতে কে কে আছেন??
-মুই আর মোর মা-ই।
-তুমি ফুল বিক্রি করো??
-হ।
-ফুল বিক্রি করেই তোমাদের সংসার চলে??
-হয় ভাইজান।
-এগুলো কি ফুল??
-দেখতাছেনই তো ভাইজান গোলাপ ফুল এগুলা।
-আশিক!আমি দেখতে পাই না ভাইয়া।যায় হোক এখানে কতটা গোলাপ আছে??
-ভাইজান মুই তো বুজ্জি নাই।মোরে মাফ কইরা দেন।মুই যাই গা।
-আহা!আমি ফুল গুলো নিবো তো।এগুলো কি লাল গোলাপ??
-হ ভাইজান।
-আচ্ছা বলো সব গুলো নিলে কত টাকা নিবে তুমি??
-বেশী লমু না ভাইজান।সব মিইল্লা ২০০ টাকা দেন।
দিনার পকেট থেকে একটা ৫০০ টাকার নোট বের করে বলল,
এটা কত টাকার নোট আশিক??
-ভাইজান এইডা তো ৫০০ টেকার নোট।
-আচ্ছা তুমি এটা নিয়ে গিয়ে তোমার মায়ের ঔষধ নিও।
-না ভাইজান।মুই ভিক্ষা করি না।
-তুমি ভিক্ষা বলছ কেন??আমিও তো তোমাকে ভিক্ষা দেইনি।আমাদের নবী সা. তো এই শিক্ষা দেননি।তিনি ভিক্ষা বৃত্তিকে পছন্দ করতেন না।আমি তোমাকে শুধু মাত্র তোমার ফুলের দাম দিলাম।ভাবতে পারো এটা তোমায় বকসিস দিলাম।
-আইচ্চা ভাইজান।যাই গা।
-ঠিক আছে যাও ভাইয়া।
গোলাপগুচ্ছ হাতে নিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করলো দিনার।ভাবছে ছেলেটির কথা। ছেলেটির মা আছে।কিন্তু দিনারের মা বাবা কেউ নেই। ছোটবেলায় মারা গেছেন তারা। আজ মা বাবা থাকলে কতই না যত্ম করতেন। এসব ভাবতে ভাবতে আনমনে সমুদ্রের ধারে হাঁটছিলেন।হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লাগলো।খুব সম্ভবত কোনো মেয়ের সাথে।দিনার লজ্জিত বোধ করলো।একটু সাবধান হওয়া উচিত ছিলো।মেয়েটি নিচুকন্ঠে ভদ্রতা মিশ্রিত আওয়াজে বললেন, আপনি কি দেখতে পাননি??
-দুঃখিত!আমি চোখে দেখতে পাইনা। একটু আনমনা হয়েছিলাম তাই অসাবধানতার ফলে ধাক্কা লেগে গিয়েছে।আসলে ভুলটা আমার।কিছু মনে করবেন না। দয়া করে ক্ষমা করে দিবেন।
-এভাবে বলার কিছু নেই।আপনার সঙ্গে কেউ আসেননি??
-না।আমার বাবা মা নেই। আমি পাশেরই একটা মসজিদের ইমাম।সমুদ্রের আওয়াজ শুনতে ভালো লাগে তাই বালুকায় হাঁটতে বেড়িয়েছিলাম।
-আচ্ছা।
কিছুক্ষণ ফিসফিসিয়ে কথা বলার আওয়াজ পেল দিনার।সে ভাবছে চলে যাবে কিনা।অতঃপর
একটা পুরুষালি কণ্ঠ শুনতে পেলো দিনার।একজন পুরুষ বললেন,
বাবা তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে করবে??
দিনার হতভম্ব হয়ে গেছে।এ কেমন কথা!দিনার তো উনাদের চেনেন না।জানেনও না।উানরাও দিনার কে চেনে না, জানে না।অথচ বিয়ের কথা বলছে।
-বাবা চিন্তা করার কোনো কারণ নেই।আমার মেয়ে দেখতে মাশাআল্লাহ্ সুন্দরী।সে নিজে থেকেই তোমাকে বিয়ে করতে চায়।আর আমরা তোমাকে চিনি না।তবুও বিয়ের প্রস্তাব দিলাম কারণ তোমাকে বিশ্বাস করতে মন শায় দিচ্ছে।তুমি চাইলে ভাবার জন্য সময় নাও।তোমার ঠিকানা দিয়ে যাও আমরা পরে যোগাযোগ করবো।
-আপনারা সব জেনেও আপনাদের মেয়েকে দিতে চান??
-হ্যাঁ বাবা।
-ঠিক আছে, আমার কোনো আপত্তি নেই।


সেদিনই ছিলো ওদের বিয়ের দিন।আজ তানজিরা দিনারের বউ।
হঠাৎ করে হাল্কা ধাক্কা অনুভব করলো দিনার।
-কি ভাবছ??চলো বারান্দায় যাই।বৃষ্টি হচ্ছে অনেক।বৃষ্টি দেখবো।
-হুম চলো।
তানজিরা বৃষ্টি দেখছে আর দিনার অনুভব করছে।বৃষ্টির আওয়াজ কত সুন্দর হয়!আজ দিনারের প্রথমবারের মত যেন মনে হচ্ছে সে পরিপূর্ণ। আল্লাহ্ তাকে পূর্ণ করে দিয়েছেন এই মেয়েটিকে দিয়ে।মনে মনে সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলো।
dark.specialtyintelligencee.blogspot.com

No comments

Powered by Blogger.