চলে যায়
চলে যায়
কে এস আব্বাস
একটা ছেলে একটা মেয়েকে খুব
ভালোবাসতো! একদিন মেয়েটা
ছেলেটাকে ছেড়ে চলে যায়,
কিছুদিন পর সেই মেয়েটিকে দেখা
যায় অন্য একটি ছেলের সাথে রিকশা
করে ঘুরে বেড়াচ্ছে!!! অতঃপর পূর্বের
ছেলেটি ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়েটার
বাসায় যায়, গিয়ে মেয়েটার গালে
সজোরে থাপ্পড় মারে!!! আর বলে,
–তুই এতো খারাপ এটা আগে জানতাম
না। জানলে তোর মত নর্তকীর সাথে
প্রেম করতাম না। তুই আসলেই একটা
নষ্টা মেয়ে!!!
ইত্যাদি বলে মেয়েটাকে
গালিগালাজ করে! কিন্তু মেয়েটা
কোনো রেসপন্স দেয় না, অপরাধীর মত
সব সহ্য করে।
যখন ছেলেটা বাসা থেকে বের হয়ে
যাবে, তখন মেয়েটা বলে উঠলো,
“আবির একটা কথা ছিলো!” –তুই আর কি
বলবি হ্যা? তোর আর কি বলার আছে? –
কিছুনা, তবে একটা অনুরোধ। –কি?
তাড়াতাড়ি বল….
–তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হও।
আর পারলে আমাকে ভুলে যেও!
–আরে তোর মত বাজারের
মেয়েকে’তো আমি তখনই ভুলে গেছি!
যখন দেখেছি রিকশা করে অন্য একটি
ছেলের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছিস। .
কথাগুলো বলে ছেলেটা চলে গেল!
আর আরহী বিছানায় শুয়ে চিৎকার করে
কাঁদছে, আর বলছে, –হে আল্লাহ্ তুমি
কেন আমাকে এত কষ্ট দিচ্ছো?!!!
আমাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাও।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর মেয়েটা ভাবছে,
“নাহ্ সব ঠিক আছে! আমি নাহয় একটু কষ্ট ই
পেলাম! কিন্তু আমার আবিরতো এখন
সুখী হবে। এটাই আমার কাছে বড়
পাওয়া……”
.
তার ১সপ্তাহ্ পর, মেয়েটার সামনে
বিয়ের কার্ড হাতে ছেলেটা
উপস্থিত!!! –আরহী আমি আগামী
শুক্রবার বিয়ে করতে যাচ্ছি, প্রথম
দাওয়াতটা তোমাকেই দিলাম!
আসবেতো? এসো…..
বলে ছেলেটা চলে গেল! তৎক্ষণাৎ
আরহীর চোখ থেকে দুফোটা জল
গড়িয়ে পড়লো কার্ডের উপর। .
মেয়েটা উপরের দিকে তাকিয়ে
বলছে, –হে আল্লাহ্ আমি আর পারছি
না। আমি নিজের চোখে আবিরের
বিয়ে দেখতে পারবো না। তুমি একটু
সহায় হও…… .
আজ শুক্রবার!
জুম্মার নামাজের পর আবিরের বিয়ের
কার্য সম্পূর্ণ হয়! কিন্তু আবির বারবার
তাকিয়ে দেখছে, আরহী আসে কিনা!
আসলে আজকেও একটু অপমান করে মনের
জ্বালটা মেটানো যাবে। কিন্তু নাহ্,
আরহী আসেনি। একটা দুঃসংবাদ
এসেছে!!!
আরহী এই দুনিয়াতে নেই! একটু আগে সে
মারা গেছে!
কথাটা শুনার সাথে-সাথে আবির
দৌড়ে চলে গেল আরহীর বাসায়!
গিয়ে দেখে, তার আরহী ঘুমিয়ে
আছে! চিরজীবনের মত ঘুমিয়ে আছে!!! .
আবির কাঁদতে পারছে না, শুধু অবাক
হয়ে আরহীর মুখের দিকে তাকিয়ে
আছে! আর স্মৃতিপটে ভেসে আসছে
পূর্বের খুনসুটিগুলো। এমন সময় আবিরের
ঘোর ভেঙ্গে দিয়ে একটি ছেলে বলে
উঠলো, –ভাইয়া!!! ছেলেটাকে চিনতে
একটুও ভুল হলো না আবিরের এটাই সেই
ছেলে যাকে আরহীর সাথে রিকশায়
দেখেছিলো!!!
ছেলেটা আবিরের কাঁধে হাত রেখে
বলছে, “ভাইয়া আপনাকে এই চিঠিটা
দিতে বলেছিলো আরহী আপু!” পারলে
একটু পড়ে নিয়েন…… তৎক্ষণাৎ চিঠিটা
উল্টিয়ে পড়তে লাগলো আবির, .
“জানি তুমি অবাক হবে, কারন যে
ছেলেটা তোমাকে চিঠিটা দিলো
সে আমার ছোটভাই রাফি । ও আমার
মামাতো ভাই।
কি করবো বলো? আমিতো জানতামনা
যে আমার শরীরে মরনব্যাধি ক্যান্সার
আছে! জানলে কখনো তোমার সাথে
প্রেম করতাম না। যখন জানলাম আমি
ক্যান্সারের রোগী, তখন আমার পায়ের
নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছিল।
সিদ্ধান্ত নিলাম তোমার থেকে দূরে
সরে যাব। নাহলেতো তুমি সুখী হতে
পারবে না। এখন তুমি আমাকে ঘৃণা
করো, আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু
একটা কষ্ট কি জানো? যখন তুমি
আমাকে নষ্টা, নর্তকী, বাজারের
মেয়ে বলছিলে তখন সত্যিই খুব খারাপ
লাগছিলো আমার! আমি কি আসলেই
এমন?
.
যাইহোক আজকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাই
না তোমাকে! শুধু একটা অনুরোধ,
আমাকে যদি একটুও ভালোবেসে
থাকো, তবে সেই ভালবাসার কসম! তুমি
বিয়ে করে সুখে সংসার করো।
আমি সবসময় তোমাকে সুখী দেখতে
চাই, আর এটাই তোমার কাছে আমার
শেষ চাওয়া।” .
.
চিঠিটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে
চোখের জলে পুরোটা পৃষ্ঠা ভিজে
গেল।
প্রিয় মানুষ গুলো চায় তার ভালবাসার মানুষটি যেন সুখে থাকে। কাউকে হারালে বুঝা যায় সে তোমার কত আপন ছিল। তখন দিনরাত কাদলে ও কোনো লাভ হয় না।
No comments