এখন শুধুই স্মৃতি
এখন শুধুই স্মৃতি
ওয়েটিং রুমে গুটিসুটি মেরে বসে থাকা মেয়েটিকে হঠাৎ দেখে অামি চমকে গেলাম।
কোলে দু'হাত রেখে শান্তভাবে বসে থাকা মেয়েটি ৫ বছর অাগের সেই নীলা।
যাকে অামি ক্যারিয়ারের বাহানায় ছেড়ে চলে এসেছিলাম জীবনে অনেক বড় কিছু করতে।
কিন্তু সেই প্রাণচাঞ্চল্য, স্মার্ট নীলার সাথে এই নীলার অনেক তফাৎ।
৫ বছর অাগের নীলা কখনো চুলকে লম্বা হতে দিতোনা।
কাঁধ পর্যন্ত ঘন কালো চুলে এক চোখ ঢাকা সেই রুপবতী চেহারার যে কতবার অামি প্রেমে পড়েছিলাম সেসব এখন শুধুই স্মৃতি।
সেই নীলা ছিলো রুপবতী।
অার হালকা নীল শাড়িতে, কোমর অব্দি লম্বা বেনুনে অাজকের এই নীলাকে ঠিক রুপবতী বলা চলেনা।
কবিদের ভাষায় হয়তো এমন নীলাকে মায়াবতী বলে অাক্ষায়িত করা হতো।
অার অামার ভাষায় এক পরিপূর্ণ নারী।
হুম, অাজ নীলাকে একজন পরিপূর্ণ নারী লাগছে।
যার কারন হয়তো এই শাড়ি, নয়তো তার কপালের মাঝে চুপটি করে বসে থাকা কালো টিপটি। অথবা তার লম্বা চুলও হতে পারে।
নীলাকে নিয়ে যখন অামার মন এসব মন্তব্য করছিলো তখনই অামার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে হঠাৎ অামার সেক্রেটারি বললো,
-- স্যার ডোনেশানেরর জন্য অাসতে বলেছিলেন যে, উনি সে।
অামি কিছুটা দ্বিধা অার জড়তা নিয়ে নীলার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
অামাকে দেখেই নীলা অবাক হয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো।
তার চেহারায় হাজারো সংশয় অামি তার চোখে ফুঁটে উঠতে দেখলাম।
কিন্তু কয়েকমিনিটের মাঝে সে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
-- হ্যালো স্যার!
-- কেমন অাছো?
-- জ্বী ভালো। ধ্রুবতারা শিশু সংগঠনের ডোনেশানের জন্য অামাকে পাঠানো হয়েছে। অামাদের সংগঠন টি অাসলে একটি এতিমখানা। এখানে সেসব বাচ্চাদের রাখা হয় যাদের পরিবার নেই।
নীলা একটানা সব বলেই যাচ্ছিলো। হঠাৎ অামি তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
-- তোমার বর কি করে নীলা?
হঠাৎ সরল চাহনির নীলা কঠিন চোখে তাকিয়ে জবাব দিলো,
-- পারসোনাল ব্যাপারে জানার তো প্রয়োজন নেই তাই না মিস্টার. অাকাশ সাহেব?
-- নাম এখনো মনে অাছে তাহলে!
-- যে জীবনের ৫ টি বসন্তকে খুশিতে ভরিয়ে দিয়ে বাকি সব বসন্তের খুশি কেড়ে নিয়ে মাঝ পথে ফেলে চলে গিয়েছিলো জীবনকে রিক্ত করে দিয়ে, তার নাম কখনো ভুলা যায়?
নীলার মুখে এমন কঠিন অার সিরিয়াস সব কথা শুনে কিছু সময়ের জন্য অামি নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিলাম। নীলা তখন হঠাৎ বলে উঠলো,
-- অাপনি অাজ ডোনেশান না দিতে পারলে অামি যাচ্ছি, পরে অাসবো।
এই বলেই নীলা উঠে চলে গেলো। অার অামি তার চলে যাওয়া পথে তাকিয়ে ভাবছিলাম সেই সব দিন গুলোর কথা। কত টা বদলে গেছে নীলা। তার গোছালো সব কঠিন কথা অাজ অামায় তার প্রতি অাবার টানছে। অাজ মনে হচ্ছে কেন অামি নীলাকে ছাড়লাম! কেন তাকে সাথে রেখে একসাথে দু'জন মিলে জীবনে বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখলাম না। কেন!!
এসব ভাবনার কথা জানতে পেরে অামার মন যেন তখন হঠাৎ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে অামায় বারবার ধিক্কার দিলো।
কি অদ্ভুত হয় মনুষ্য মন! বড় হওয়ার নেশায় যাকে দূরে সরিয়ে দিলাম একদিন, অাজ তাকে অাবার কাছে চাইছে মন।
টানা ২ দিন নীলার ব্যপারে খোঁজ নিয়া যখন জানতে পারলাম বন্ধ্যাত্বার জন্য ডিভোর্স হওয়া নীলা এখন শিশু সংগঠনের জন্য নিজের সবটুকু দিয়ে এতকিছু করছে তখনি নতুন করে ওকে পাওয়ার অাশায় চলে গেলাম তাদের সংগঠনে।
অামাকে দেখেই নীলার চোখ কঠিন হয়ে গেলো। চাহনির মত কণ্ঠস্বরকেও কঠিন করে নীলা বললো,
-- কেন এসেছেন?
-- অনেক বড় কিছু হওয়ার জন্য যে মানুষটি অনেক ভালো কিছুকে ছেড়ে দিয়েছিলো সে অাজ অনেক বড়লোক ঠিকই হতে পেরেছে নীলা। কিন্তু অনেক ভালো কিছু অাসলেই সে পায়নি নীলা। জীবনে টাকার পিছে ছুটতে গিয়ে অামি ভুলেই গেছি সুখ পেতে অারো একটা কিছু দরকার। অার তা পরিবার। যা অাগে না বুঝার জন্য এখনো অামি সিংগেল নীলা।
-- তো অামি কি করবো?
-- নীলা তুমি কি পারোনা শেষ পাঁচ টা বছর কে ঘুমে দেখা একটি দুঃস্বপ্ন ভেবে জীবন কে অামার সাথে নতুন করে শুরু করতে? নীলা অামি জানি অামি ক্ষমার অযোগ্য। অামার মস্ত বড় ভুলের ক্ষমা এত সহজে হবেনা। কিন্তু তুমি একবার প্লিজ চেষ্টা করো। প্লিজ নীলা।
-- কেনো? অাপনার এত টাকা বুঝি অাপনাকে সুখ দিতে পারলো না? একটা সুখি পরিবার দিতে পারলো না? টাকা তো অাছে। তো পরিবারও কিনে নিন সে টাকায়। কিন্তু অামি অন্তত টাকায় বিক্রি হতে চাইনা। এই যে দেখছেন এই বাচ্চাগুলোকে, এরাই অামার পরিবার অার এরাই অামার সব। তো, তাই অার কখনো এমন অাবদার নিয়ে অামার কাছে অাসবেন না। গুড বাই।
এই বলেই নীলা চলে গেলো।
অার অামি অাবারো ওর চলে যাওয়া পথে চেয়ে ছলছল চোখে এক কষ্টের হাসি দিয়ে মনে মনে বললাম, নীলা তুমি সত্যিই এখন এক পরিপূর্ণ নারী।
যে কিনা চোখে এখনো অামার জন্য ভালোবাসা রেখে মুখে বলে দিলে ভালোবাসোনা তুমি।
পৃথিবীর নিয়মগুলো অাসলেই অদ্ভুত! অদ্ভুত বলেই অাজ দু'জন মানুষ দু'জন কে সত্যিই ভালোবাসার পরও পরিবেশ অার পরিস্থিতি তাদের এক হতে দিলোনা।
কেউ কষ্টে বুকে চেপে নিজেকে ধিক্কার দেয় অার কেউ চোখের জল মুছে গর্ব করে মন কে বলে,
" অাজ অামি পেরেছি তাকে দিতে ফিরিয়ে "
গল্প:শুধুই স্মৃতি
কোলে দু'হাত রেখে শান্তভাবে বসে থাকা মেয়েটি ৫ বছর অাগের সেই নীলা।
যাকে অামি ক্যারিয়ারের বাহানায় ছেড়ে চলে এসেছিলাম জীবনে অনেক বড় কিছু করতে।
কিন্তু সেই প্রাণচাঞ্চল্য, স্মার্ট নীলার সাথে এই নীলার অনেক তফাৎ।
৫ বছর অাগের নীলা কখনো চুলকে লম্বা হতে দিতোনা।
কাঁধ পর্যন্ত ঘন কালো চুলে এক চোখ ঢাকা সেই রুপবতী চেহারার যে কতবার অামি প্রেমে পড়েছিলাম সেসব এখন শুধুই স্মৃতি।
সেই নীলা ছিলো রুপবতী।
অার হালকা নীল শাড়িতে, কোমর অব্দি লম্বা বেনুনে অাজকের এই নীলাকে ঠিক রুপবতী বলা চলেনা।
কবিদের ভাষায় হয়তো এমন নীলাকে মায়াবতী বলে অাক্ষায়িত করা হতো।
অার অামার ভাষায় এক পরিপূর্ণ নারী।
হুম, অাজ নীলাকে একজন পরিপূর্ণ নারী লাগছে।
যার কারন হয়তো এই শাড়ি, নয়তো তার কপালের মাঝে চুপটি করে বসে থাকা কালো টিপটি। অথবা তার লম্বা চুলও হতে পারে।
নীলাকে নিয়ে যখন অামার মন এসব মন্তব্য করছিলো তখনই অামার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে হঠাৎ অামার সেক্রেটারি বললো,
-- স্যার ডোনেশানেরর জন্য অাসতে বলেছিলেন যে, উনি সে।
অামি কিছুটা দ্বিধা অার জড়তা নিয়ে নীলার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
অামাকে দেখেই নীলা অবাক হয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো।
তার চেহারায় হাজারো সংশয় অামি তার চোখে ফুঁটে উঠতে দেখলাম।
কিন্তু কয়েকমিনিটের মাঝে সে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
-- হ্যালো স্যার!
-- কেমন অাছো?
-- জ্বী ভালো। ধ্রুবতারা শিশু সংগঠনের ডোনেশানের জন্য অামাকে পাঠানো হয়েছে। অামাদের সংগঠন টি অাসলে একটি এতিমখানা। এখানে সেসব বাচ্চাদের রাখা হয় যাদের পরিবার নেই।
নীলা একটানা সব বলেই যাচ্ছিলো। হঠাৎ অামি তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
-- তোমার বর কি করে নীলা?
হঠাৎ সরল চাহনির নীলা কঠিন চোখে তাকিয়ে জবাব দিলো,
-- পারসোনাল ব্যাপারে জানার তো প্রয়োজন নেই তাই না মিস্টার. অাকাশ সাহেব?
-- নাম এখনো মনে অাছে তাহলে!
-- যে জীবনের ৫ টি বসন্তকে খুশিতে ভরিয়ে দিয়ে বাকি সব বসন্তের খুশি কেড়ে নিয়ে মাঝ পথে ফেলে চলে গিয়েছিলো জীবনকে রিক্ত করে দিয়ে, তার নাম কখনো ভুলা যায়?
নীলার মুখে এমন কঠিন অার সিরিয়াস সব কথা শুনে কিছু সময়ের জন্য অামি নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিলাম। নীলা তখন হঠাৎ বলে উঠলো,
-- অাপনি অাজ ডোনেশান না দিতে পারলে অামি যাচ্ছি, পরে অাসবো।
এই বলেই নীলা উঠে চলে গেলো। অার অামি তার চলে যাওয়া পথে তাকিয়ে ভাবছিলাম সেই সব দিন গুলোর কথা। কত টা বদলে গেছে নীলা। তার গোছালো সব কঠিন কথা অাজ অামায় তার প্রতি অাবার টানছে। অাজ মনে হচ্ছে কেন অামি নীলাকে ছাড়লাম! কেন তাকে সাথে রেখে একসাথে দু'জন মিলে জীবনে বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখলাম না। কেন!!
এসব ভাবনার কথা জানতে পেরে অামার মন যেন তখন হঠাৎ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে অামায় বারবার ধিক্কার দিলো।
কি অদ্ভুত হয় মনুষ্য মন! বড় হওয়ার নেশায় যাকে দূরে সরিয়ে দিলাম একদিন, অাজ তাকে অাবার কাছে চাইছে মন।
টানা ২ দিন নীলার ব্যপারে খোঁজ নিয়া যখন জানতে পারলাম বন্ধ্যাত্বার জন্য ডিভোর্স হওয়া নীলা এখন শিশু সংগঠনের জন্য নিজের সবটুকু দিয়ে এতকিছু করছে তখনি নতুন করে ওকে পাওয়ার অাশায় চলে গেলাম তাদের সংগঠনে।
অামাকে দেখেই নীলার চোখ কঠিন হয়ে গেলো। চাহনির মত কণ্ঠস্বরকেও কঠিন করে নীলা বললো,
-- কেন এসেছেন?
-- অনেক বড় কিছু হওয়ার জন্য যে মানুষটি অনেক ভালো কিছুকে ছেড়ে দিয়েছিলো সে অাজ অনেক বড়লোক ঠিকই হতে পেরেছে নীলা। কিন্তু অনেক ভালো কিছু অাসলেই সে পায়নি নীলা। জীবনে টাকার পিছে ছুটতে গিয়ে অামি ভুলেই গেছি সুখ পেতে অারো একটা কিছু দরকার। অার তা পরিবার। যা অাগে না বুঝার জন্য এখনো অামি সিংগেল নীলা।
-- তো অামি কি করবো?
-- নীলা তুমি কি পারোনা শেষ পাঁচ টা বছর কে ঘুমে দেখা একটি দুঃস্বপ্ন ভেবে জীবন কে অামার সাথে নতুন করে শুরু করতে? নীলা অামি জানি অামি ক্ষমার অযোগ্য। অামার মস্ত বড় ভুলের ক্ষমা এত সহজে হবেনা। কিন্তু তুমি একবার প্লিজ চেষ্টা করো। প্লিজ নীলা।
-- কেনো? অাপনার এত টাকা বুঝি অাপনাকে সুখ দিতে পারলো না? একটা সুখি পরিবার দিতে পারলো না? টাকা তো অাছে। তো পরিবারও কিনে নিন সে টাকায়। কিন্তু অামি অন্তত টাকায় বিক্রি হতে চাইনা। এই যে দেখছেন এই বাচ্চাগুলোকে, এরাই অামার পরিবার অার এরাই অামার সব। তো, তাই অার কখনো এমন অাবদার নিয়ে অামার কাছে অাসবেন না। গুড বাই।
এই বলেই নীলা চলে গেলো।
অার অামি অাবারো ওর চলে যাওয়া পথে চেয়ে ছলছল চোখে এক কষ্টের হাসি দিয়ে মনে মনে বললাম, নীলা তুমি সত্যিই এখন এক পরিপূর্ণ নারী।
যে কিনা চোখে এখনো অামার জন্য ভালোবাসা রেখে মুখে বলে দিলে ভালোবাসোনা তুমি।
পৃথিবীর নিয়মগুলো অাসলেই অদ্ভুত! অদ্ভুত বলেই অাজ দু'জন মানুষ দু'জন কে সত্যিই ভালোবাসার পরও পরিবেশ অার পরিস্থিতি তাদের এক হতে দিলোনা।
কেউ কষ্টে বুকে চেপে নিজেকে ধিক্কার দেয় অার কেউ চোখের জল মুছে গর্ব করে মন কে বলে,
" অাজ অামি পেরেছি তাকে দিতে ফিরিয়ে "
গল্প:শুধুই স্মৃতি
No comments